জামালপুর জেলার মাদারগঞ্জ উপজেলার যমুনা নদীর শাখা ত্রিশেরদহ নদীর উপর কোন সেতু না থাকায় বাশের সাকো দিয়ে পার হচ্ছে ৯ গ্রামের প্রায় ২০ হাজার মানুষ। ঝুকিপূর্ণ এই সাকো দিয়ে পারাপারের সময় প্রায়ই দূর্ঘটনার শিকার হচ্ছে এই গ্রামবাসী।জনপ্রতিনিধিদের কাছে ধর্ণা দিয়েও হচ্ছে না সমাধান। এমন কি সেতুর অভাবে ছেলে মেয়েদের ভালো জায়গায় বিয়েও দিতে পারছেন না ।
আরো পড়ুন - ফুটবল জাদুকর মেসির স্পর্শে প্রথমবার ফাইনালে। মিয়ামি
এলাকাবাসীরা জানান, উক্ত উপজেলার কয়রা বাজার হতে ২ কিমি দক্ষিনে ফুলারপাড়া গ্রাম। আশপাশে সীমান্ত বর্তী সরিষাবাড়ী উপজেলা সহ মোট আটটি গ্রামের অবস্থান। গ্রামের পাশেই বয়ে চলেছে যমুনা নদীর শাখা ছোট নদী (ত্রিশেরদহ)। পূর্বে এলাকাবাসীরা নৌকা দিয়ে নদী পার হতো। কিন্তু পরে নিজস্ব অর্থায়ন ও স্বেচ্ছাশ্রমের মাধ্যমে একটি ৯২ মিটার দৈর্ঘ্যের একটি বিশাল বাশের সাকো নির্মান করেন।কিন্তু বর্তমানে সাকোটির বয়স প্রায় ১৫-১৬ বছর হয়ে যাওয়ায় সাকোটি এখন নড়বড়ে হয়ে গেছে। ঝুকিপূর্ণ এই সাকো দিয়ে ফুলারপাড়া,জামিরা,পাটাদাহ,কয়রা,চররৌহা,নান্দিনা,খালিশাকুড়ি সহ দুই পাড়ের ৯টি গ্রামের প্রায় ২০ হাজার মানুষ পারাপার হচ্ছেন। একটি মাত্র সেতুর অভাবে তারা দীর্ঘদিন যাবৎ দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। নির্বাচন এলে জনপ্রতিনিধিরা আশার বানী শোনালেও পরে তাদের আর খুজে পাওয়া যায় না।
সরেজমিনে দেখা যায় ৯২ মিটার এই সাকো দিয়ে অহরহ মানুষের পাশাপাশি বাইসাইকেল, মটরসাইকেল ও ভ্যান পার হচ্ছে। সাকোর অনেক জায়গায় ভেঙ্গে গেছে। তবু এই ঝুকিপূর্ন সাকো দিয়েই পারাপার করছেন গামের খেটে খাওয়া মানুষ।
গ্রামবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, উপজেলা শহর, ইউনিয়ন পরিষদ, এবং বাজারে যেতে হলে এই রাস্তাই তাদের সহজ। বিকল্প পথে যেতে হলে অনেকটা পথ ঘুরতে হয়। এতে উপাদিত কৃষিপন্যের ন্যায্যমূল্য থেকে তারা বঞ্চিত হন। রাস্তার এমন বহাল দশার কারনে অনেকেই আত্নিয়তা করতে চায়না। ছেলে মেয়ের ভালো কোন বিয়ের কথা হলে সেতুর অভাবে হরহামেশাই তা ভেঙ্গে যায়। তাই একটি সেতু নির্মানের দাবিতে বিভিন্ন সময় মানববন্ধন, বিক্ষোভসহ বিভিন্ন কর্মসুচি তারা পালন করেছেন। কিন্তু তাতে কোন কাজ হয়নি।
ফুলপাড়া গ্রামে একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও একটি মাদ্রাসা রয়েছে। আর এই ঝুকিপূর্ণ বাশের সাকো পার হয়েই স্কুলে যেতে হয় এসব প্রতিষ্ঠানরে ছোট বড় শিক্ষার্থীদের। সাকো পারাপারের সময় প্রায়ই তাদের দূর্ঘটনার শিকার হতে হয়। জামিরা দাখিল মাদ্রাসার একজন শিক্ষক বলেন - একটি সেতুর অভাবে উন্নয়নের ছোয়া থেকে বঞ্চিত এলাকাবাসী। দীর্ঘদিন যাবৎ শিক্ষার্থীরা বাশের সাকো দিয়েই যাতায়াত করছে। সাকোটি এখন আর আগের মত নেই। মাঝে মাঝে ভেঙ্গে পড়েছে। এরফলে মাদ্রাসায় আসার সময় প্রায়ই শিক্ষার্থীদের বইখাতা নদী পড়ে ভিজে যায়। একারনে অনেকে মাদ্রাসায় আসতে চায় না।
জোড়া খালি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়াম্যান মো:সুরুজ মিয়া বলেন এখানে একটি নয় ছোট বড় মিলিয়ে প্রায়৫টি ব্রিজের দরকার।এই সরকারের আমলে অনেক উন্নয়ন হলেও এই এলাকাটি কিছুটা পিছিয়ে রয়েছে। এবিষয়ে উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানানো হয়েছে। তারা কথা দিয়েছেন। কিন্তু আসন্ন সংসদ নির্বাচনের আগে এই ব্রিজ গুলো হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম।
মাদারগঞ্জের নির্বাহী কর্মকর্তা ইলিশা রিছিল মুঠোফোনে সংবাদ মাধ্যমকে জানান, এই নদীর উপর একটি সেতু নির্মানের দাবী এলাকাবাসীর দীর্ঘদিনের চাওয়া। আর এই প্রেক্ষিতে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে চিঠি পাঠানো হয়েছে। আশা করছি খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে এর নিরসন হবে।