বাংলাদেশে ১ম বারের মতো চালু হয়েছে সর্বজনীন পেনশন স্কিম। বেসরকারি খাতে পেনশনের নতুন এক মাত্রা যোগ হলো। আগামী দিনে বেসরকারি চাকরি থেকে অবসরে গিয়েও পেনশন সুবিধা ভোগ করা যাবে এই পদ্ধতিতে । বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মচারী, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, স্বনির্ভর পেশাজীবি ও স্বল্প-আয়ের যে কোন সাধারন নাগরিক এবং প্রবাসী বাংলাদেশিরা এতে অংশ নিতে পারবেন।
সর্বজনীন পেনশন উদ্বোধন
বহুল আলোচিত ও প্রত্যাশিত এই ‘সর্বজনীন পেনশন কর্মসূচি’ বৃহস্পতিবার (১৭ আগস্ট) সকাল ১০টায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবন থেকে ভার্চ্যুয়ালি সংযুক্ত হয়ে উদ্বোধন করেছেন। উদ্বোধনের দিন থেকেই জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষের ওয়েবসাইটে গিয়ে পেনশন কর্মসূচি রেজিস্ট্রেশন করা যাচ্ছে।
ওয়েবসাইটের নাম
সর্বজনীন পেনশন কর্মসূচি রেজিস্ট্রেশন ও ব্যবস্থাপনার জন্য সরকার সম্পূর্ণ পৃথক একটি ওয়েবসাইট চালু করেছে। সেটি হচ্ছে— www.upension.gov.bd। ১৮ বছরের বেশি বয়স হলেই যে কেউ এখানে অনলাইনে আবেদন করতে পারবেন।
পেনশন স্কিম কত প্রকার
চার প্রকারের স্কিমের মধ্যে রয়েছে- প্রবাস স্কিম (প্রবাসী বাংলাদেশি নাগরিকদের জন্য), প্রগতি স্কিম (বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীদের জন্য), সুরক্ষা স্কিম (স্বকর্মে নিয়োজিত নাগরিকদের জন্য) এবং সমতা স্কিম (স্বকর্মে নিয়োজিত স্বল্প আয়ের নাগরিকদের জন্য)।
আবেদন করতে কী কী লাগবে
জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর, জন্মতারিখ, মোবাইল নম্বর, ইমেইল আইডি, ব্যাংক একাউন্ট নম্বর, ব্যাংকের শাখার নাম, রাউটিং নম্বর, নমিনির জাতীয় পরিচয়পত্র, জন্মসনদ বা পাসপোর্ট নম্বর, নমিনির মোবাইল নম্বর এবং নিজের বার্ষিক আয় জানা থাকতে হবে।
সর্বজনীন পেনশন আবেদন করার নিয়ম -
বেশ কয়েকটি ধাপে আপনাকে আবেদন সম্পন্ন করতে হবে। প্রথমে আপনাকে জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষের নিদৃষ্ট ওয়েবসাইটে যেতে হবে। তারপর সবার ডান পাশের পেনশনার রেজিস্ট্রেশন বাটনে ক্লিক করতে হবে। অথবা সরাসরি এখানে ক্লিক করুন।
— ব্যক্তিগত তথ্য
ফরমের প্রথমেই লেখা থাকবে রেজিস্ট্রেশন করুন —‘এই মর্মে প্রত্যয়ন করছি যে আমি সরকারি, আধা সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত বা রাষ্ট্রায়ত্ত কোনো প্রতিষ্ঠানে কর্মরত নই। সর্বজনীন পেনশন স্কিমবহির্ভূত কোনো ধরনের সরকারি বা স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান থেকে সুবিধা গ্রহণ করি না। আমি সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় কোনো ধরনের ভাতা গ্রহণ করি না।’
এই পেজের নিচের দিকে আমি সম্মত আছি বাটনে ক্লিক করে প্যাকেজ/স্কিম নির্বাচন করতে হবে; এনআইডির নম্বর দিতে হবে; জন্মতারিখ নির্বাচন করতে হবে; মোবাইল নম্বর দিতে হবে; ইমেইল আইডিও দিতে হবে। তারপর ক্যাপচা প্রদান করে পরবর্তী পেজে যেতে হবে।
— ওটিপি
এরপর আপনার মোবাইলে একটি ওটিপি যাবে। সেটি প্রদান করতে হবে। এরপর পরবর্তী পেজে চলে যাবে। সেখানে আপনার এনআইডির ছবিসহ যাবতীয় তথ্য স্বয়ংক্রিয়ভাবে চলে আসবে। এই পেজে আপনাকে বার্ষিক আয় উল্লেখ করে পেশা সিলেক্ট করতে হবে। এরপর বিভাগ, জেলা ও উপজেলা সিলেক্ট করতে হবে।
— স্কিমের তথ্য
এরপর পরবর্তী পেজে স্কিম সিলেক্ট করাই থাকবে। আপনাকে শুধু মাসিক চাঁদার পরিমাণ সিলেক্ট করতে হবে এবং চাঁদা পরিশোধের ধরন সিলেক্ট করতে হবে। অর্থাৎ আপনি মাসিক, ত্রৈমাসিক কিংবা বার্ষিকভাবে চাঁদা পরিশোধ করতে পারবেন। এরপর পরবর্তী বাটনে ক্লিক করতে হবে।
— ব্যাংক তথ্য
এই পেজে ব্যাংক একাউন্ট নম্বর উল্লেখ করে হিসাবের ধরন সিলেক্ট করতে হবে। এরপর রাউটিং নম্বর জানা থাকলে দিতে হবে আর জানা না থাকলে জানা নাই বাটনে ক্লিক করে ব্যাংকের নাম ও শাখার নাম সিলেক্ট করতে হবে। এতে স্বয়ংক্রিয়ভাবে রাউটিং নম্বর, ব্যাংকের নাম ও শাখার নাম সিলেক্ট হয়ে যাবে।
— নমিনি তথ্য
এরপর নেক্সট বাটনে ক্লিক করলে নমিনির পেজ আসবে। সেখানে নমিনির আইডির ধরন সিলেক্ট করতে হবে। এখানে জাতীয় পরিচয়পত্র, জন্মনিবন্ধন ও পাসপোর্টের অপশন আছে। নমিনির যদি জাতীয় পরিচয়পত্র থাকে তাহলে তার নম্বর ও জন্মতারিখ দিতে হবে।
এরপর নমিনি সিলেক্ট করুন বাটনে ক্লিক করলে নমিনির জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্য চলে আসবে। সেখানে নমিনির সম্পর্কের ঘরে সম্পর্ক সিলেক্ট করতে হবে, নমিনির প্রাপ্যতার হার কত শতাংশ দিতে চান সেটি উল্লেখ করতে হবে। নমিনির মোবাইল নম্বরও যোগ করতে হবে। আপনি চাইলে এভাবে আরও নমিনি যুক্ত করতে পারবেন।
— পুরো ফর্ম
এরপর পরবর্তী পেজে চলে গেলে সেখানে সম্পূর্ণ ফর্মটি দেখাবে। এই পেজে আগে পূরণ করা ব্যক্তিগত তথ্য, স্কিম তথ্য, ব্যাংক তথ্য ও নমিনি তথ্য দেখানো হবে। সেখানে কোনো ভুল থাকলে সংশোধনও করতে পারবেন। এখান থেকে আপনি সম্পূর্ণ আবেদনটি ডাউনলোড করতে পারবেন।
এই পেজের সবার নিচে লেখা থাকবে— 'আমি নিশ্চিত করছি যে, উল্লিখিত সকল তথ্য সঠিক এবং আমি সর্বজনীন পেনশনের সকল আইন ও বিধিমালা সম্পর্কে অবগত হয়ে এতে সম্মতি প্রদান করছি।' সব ঠিক থাকলে সম্মতি প্রদান চেক বক্সে টিক দিয়ে আবেদন সম্পন্ন করুন বাটনে ক্লিক করতে হবে।
— পেমেন্ট
এরপর পেমেন্ট পেজ আসবে। এখানে স্কিমের নাম, চাঁদা প্রদানের ধরন ও কত টাকা চাঁদা সেটি দেখাবে। সঠিক থাকলে পেমেন্ট করুন বাটনে ক্লিক করতে হবে। এরপর সোনালী ব্যাংকের একাউন্ট বা ই-ওয়ালেট, ডাচ-বাংলা ব্যাংকের নেক্সাস কার্ড, আমেরিকান এক্সপ্রেস, ভিসা ও মাস্টার কার্ড বা মোবাইল ব্যাংকিং যেমন রকেট, বিকাশ, নগদ, উপায় বা ট্যাপের মাধ্যমে পেমেন্ট করতে পারবেন।
তবে একই সার্ভিসের জন্য আপনার অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা পেমেন্ট/কর্তন হলে দ্বিতীয় বার পেমেন্ট না করার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে লিখা আসবে । কার্ড দিয়ে পেমেন্ট করার পূর্বে কার্ড এর গেটওয়েতে যাওয়ার পরে কার্ড এর প্রথম সংখ্যা আগে থেকেই লেখা আছে কিনা খেয়াল করুন। প্রথম সংখ্যা লেখা থাকলে প্রথম সংখ্যা বাদ দিয়ে বাকি সংখ্যা দিন।
— ওয়েলকাম মেসেজ
পেমেন্ট সাকসেস হওয়ার পর আপনার মোবাইল ও ইমেইলে জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে আপনাকে একটি স্বাগত মেসেজ দেওয়া হবে। সেখানে আপনার ১৩ ডিজিটের একটি পেনশনার আইডি দেওয়া হবে। আপনার প্রথম চাঁদার টাকা গৃহীত হয়েছে বলে আপনাকে জানানো হবে।
— পেনশনার লগইন
এরপর ইউজার আইডি তৈরি করুন পেজে নিয়ে যাবে। সেখানে আপনার পেনশনার আইডি ডিফল্টে দেওয়া থাকবে। এটিই আপনার ইউজার আইডি। এরপর আপনাকে ন্যূনতম ছয় অক্ষরের পাসওয়ার্ড তৈরি করতে হবে।
এরপর ইউজার তৈরি করুন বাটনে ক্লিক করলে একটি মেসেজ দেওয়া হবে- 'আপনার ইউজার তৈরি করা হয়েছে। এখন আপনাকে লগইন পেজে নিয়ে যাওয়া হবে।' সব ঠিক থাকলে ঠিক আছে বাটনে ক্লিক করলে লগইন পেজে নিয়ে যাওয়া হবে।
— ব্যক্তিগত ড্যাশবোর্ড
লগইন করুন পেজে ১৩ ডিজিটের ইউজার, পাসওয়ার্ড ও ক্যাপচা দিয়ে পেনশনার হিসেবে লগইন করতে হবে। এরপর আপনাকে ব্যক্তিগত ড্যাশবোর্ডে নিয়ে যাওয়া হবে। এখানে আপনার পেনশনের বিস্তারিত তথ্য পাওয়া যাবে। এখানে আপনার স্কিম ইস্যুর তারিখ, মেয়াদ পূর্তির তারিখ, পরবর্তী পরিশোধের তারিখ, বকেয়া, ঋণসহ মোট কত টাকা জমা হয়েছে— সব তথ্যই পাওয়া যাবে।
প্যাকেজ ও চাঁদার পরিমাণ পরিবর্তন করা যাবে এই ড্যাশবোর্ড থেকেই । আপনি চাইলে এখান থেকে নমিনিও পরিবর্তন করতে পারবেন। এখান থেকেই আপনি চাঁদা পরিশোধ করতে পারবেন এবং চাঁদা পরিশোধের বিস্তারিতও দেখতে পারবেন।
মনে রাখতে হবে
আবেদনের সম্পূর্ণ প্রক্রিয়ার মধ্যে সব পেজের কাজ শেষ না করে পেছনে যাওয়া যাবে না। পেছনে গেলে সব প্রক্রিয়া নতুন করে শুরু করতে হবে। অর্থাৎ এনআইডি, জন্মতারিখ, মোবাইল নম্বর, ক্যাপচা ও ওটিপি দিয়ে লগইন করতে হবে। তবে সে ক্ষেত্রে পুরোনো তথ্যগুলো স্বয়ংক্রিয়ভাবে সংরক্ষিত থাকবে; নতুন করে আর লিখতে হবে না।