আশুলিয়ায় তিন খুনে গ্রেফতার সাগরকে মুক্ত করতে ২৮ লাখ টাকা খরচ
কারাগারে বসেই সন্ত্রাসীদের দিয়ে রাজনৈতিক নেতাদের খুনের পরিকল্পনা করা হচ্ছে। খুনের অভিযোগে গ্রেফতার হওয়া কিলার গ্রুপের সদস্যকে জেলখানায় ভাড়া করা হয়। তাকে জামিনে মুক্ত করার আইনি সহায়তার খরচও কারাগার থেকে দেওয়া হয়। কারাগার থেকে মুক্তি পাওয়ার পর ঐ রাজনৈতিক নেতাকে খুন করার জন্য মোটা অঙ্কের টাকা দেওয়া হয়। এরপর জামিনে মুক্ত হওয়া ঐ খুনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে ট্রিপল মার্ডারের অভিযোগে গ্রেফতার হওয়ার পর ঘটনা ফাঁস হয়।
আরো পড়ুন - খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের উন্নতির লক্ষণ নেই। চিকিৎসক
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, টাঙ্গাইল জেলা কারাগারে ধর্ষণের অভিযোগে গ্রেফতার হওয়া টাঙ্গাইল শহর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি গোলাম কিবরিয়া ওরফে বড় মনির এক ভয়ংকর খুনের পরিকল্পনা করেন। এর আগে গত ১৬ মে বড় মনির একটি ধর্ষণ মামলায় টাঙ্গাইল জেলা আদালতে হাজিরা দিতে গেলে আদালত জামিন না মঞ্জুর করে তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেয়। বড় মনিরকে দেওয়া হয় টাঙ্গাইল জেলা কারাগারে তিন বছর ধরে বন্দি সাগর আলীর সেলে। এর আগে ২০২০ সালে টাঙ্গাইলের মধুপুরে একই পরিবারের চার জনকে খুনের ঘটনায় সাগর আলীকে র্যাব গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠায়। সেই থেকে সাগর টাঙ্গাইল জেলা কারাগারে বন্দি।
$ads={1}
কারাগারে সাগরের সেলে বড় মনির আসার পর তাদের মধ্যে সখ্য হয়। সাগরের বাড়ি টাঙ্গাইলের মধুপুর হওয়ায় আগে থেকেই বড় মনিরের নাম শুনেছে। এবার একই সেলে থাকার সুবাদে অনেকটা গুরু-শিষ্য সম্পর্ক গড়ে ওঠে। বড় মনির সাগরের মামলার বিষয়ে খোঁজখবর নিতে আইনজীবী নিয়োগ করেন। মধুপুরের সেই চার খুনের মামলায় সাগরকে জামিন করানোর ব্যবস্থা করা হয়। এজন্য খরচ হয় ২৮ লাখ টাকা। শর্ত ছিল যে কারাগার থেকে সাগর বের হয়ে টাঙ্গাইল-৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আমানুর রহমান খান রানাকে খুন করতে হবে। এই খুন করতে পারলে তাকে ৩ লাখ টাকা দেওয়া হবে। চলতি বছরের জুলাই মাসে সাগর জামিনে মুক্তি পান।
আরো পড়ুন - খালেদা জিয়াকে নিয়ে জরুরি সংবাদ সম্মেলন। বিএনপি
উল্লেখ্য, ২০১৩ সালের ১৮ জানুয়ারি রাতে টাঙ্গাইল শহরের কলেজপাড়ার নিজ বাড়ির সামনে আওয়ামী লীগ নেতা ও বীর মুক্তিযোদ্ধা ফারুক আহমেদকে গুলি করে হত্যা করা হয়। হত্যার ঘটনায় দায়ের করা মামলায় টাঙ্গাইল-৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আমানুর রহমান খান রানা ও তার তিন ভাইসহ মোট ১৪ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দেয় পুলিশ। ২০১৬ সালের ৯ জুলাই রানা আদালতে আত্মসমর্পণ করেন। এরপর ২২ মাস কারাবন্দি থাকার পর ২০১৯ সালের ৯ জুলাই উচ্চ আদালতের নির্দেশে তিনি জামিনে মুক্ত হন।
$ads={1}
এদিকে সাভারের একই পরিবারের তিন জনকে হত্যার ঘটনায় সোমবার রাতে র্যাব স্ত্রীসহ সাগর আলীকে গ্রেফতার করে।
সাগরকে জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, টাঙ্গাইলের মধুপুরে চার খুনের ঘটনায় গ্রেফতার হয়ে কারাগারে যাওয়ার পর সেখানে রাজনীতিতে যুক্ত এক ব্যক্তির সঙ্গে সাগরের পরিচয় হয়। ঐ ব্যক্তিও খুনের মামলায় কারাগারে আছেন। সাগর কারাগারে ঐ ব্যক্তির সেবা করতেন। ঐ ব্যক্তি তার রাজনৈতিক এক প্রতিপক্ষকে খুনের প্রস্তাব দেন সাগরকে। এই শর্তে রাজি হওয়ার পর সাগরের জামিন হয়।
জামিনে মুক্ত হওয়ার পর কারাগারে থাকা ঐ রাজনৈতিক নেতার সহযোগীরা সাগরকে একটি অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে যান উল্লেখ করে কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, সেখানে সাগরকে ৩ লাখ টাকা দেওয়া হয়। পরে ঐ রাজনৈতিক নেতার সহযোগীদের কাছ থেকে সাগর আরও কিছু টাকা নেন। কিন্তু শর্ত অনুযায়ী ঐ প্রতিপক্ষকে খুন না করে মোবাইল ফোন বন্ধ করে আত্মগোপনে চলে যান সাগর। এক পর্যায়ে তিনি অবৈধ পথে গত জুলাই মাসে পাশের দেশে চলে যান। সেখানে ২০-২৫ দিন অবস্থান করে আগস্টে দেশে ফিরে কুমিল্লায় কিছুদিন থাকেন। পরে ২৬ সেপ্টেম্বর তিনি গাজীপুরের মৌচাক এলাকায় তার শ্বশুরবাড়িতে (ভাড়া বাসায়) যান। এর দুই দিন পর স্ত্রীকে নিয়ে আশুলিয়ায় ঐ পরিবারের তিন জনকে খুন করেন।