মহাকাশ থেকে নমুনা নিয়ে ফিরল নাসার নভোযান


 


একটি গ্রহাণু থেকে নমুনা সংগ্রহ করে সফলভাবে পৃথিবীতে ফিরেছে নভোযান ওসাইরিস-রেক্স। বেনু নামের ওই গ্রহাণু থেকে মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার এ নভোযান ফিরে এসেছে ২৪ সেপ্টেম্বর, রোববার। এটিই নাসার কোনো গ্রহাণু থেকে প্রথম নমুণা সংগ্রহ।

আরো পড়ুন - পাতা কুড়াতে মসজিদের ছাদে উঠে দুই শিশুর মৃত্যু

রোববার ভূপৃষ্ঠের প্রায় ১ লাখ ২ হাজার কিলোমিটার ওপর থেকে একটি ক্যাপসুল ছেড়ে দেয় নভোযানটি। ক্যাপসুলটি নেমে আসে ঘণ্টায় প্রায় ৪৩ হাজার কিলোমিটার বেগে। যুক্তরাষ্ট্রের উটাহ (Utah) অঙ্গরাজ্যের মরুভূমিতে অবতরণ করে এটি। মূলত ওই ক্যাপসুলের মধ্যেই আছে বেনু গ্রহাণুর নমুনা। মানে ধুলাবালু ও ছোট পাথরের টুকরো। ক্যাপসুলটি অবতরণের পর হেলিকপ্টারের সাহায্যে নির্দিষ্ট স্থানে নিয়ে যাওয়া হয়। এই নমুনা পরীক্ষা করা হবে টেক্সাসে অবস্থিত নাসার জনসন স্পেস সেন্টারে। 

আরো পড়ুন - বৈধ পথে বিদেশ গিয়ে অবৈধ পথে দেশে ফিরছেন বাংলাদেশীরা।

বিজ্ঞানীদের ধারণা, ক্যাপসুলে প্রায় ২৫০ গ্রাম নমুনা রয়েছে। তবে এখনো ক্যাপসুলটি খোলা হয়নি। আগামী দুই থেকে তিন দিনের মধ্যে খোলা হতে পারে। তখন বোঝা যাবে, ঠিক কতটুকু নমুনা নিয়ে এসেছে নভোযানটি। এ প্রসঙ্গে ওসাইরিস-রেক্স মিশনের প্রধান বিজ্ঞানী দান্তে লরেটা বলেন, ‘ক্যাপসুল খুলে দেখার জন্য আর অপেক্ষা করতে পারছি না। আমাদের আসল কাজ, আসল গবেষণা সবে শুরু হচ্ছে।’ 

এখন পর্যন্ত কোনো গ্রহাণু থেকে সবচেয়ে বেশি নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে এ অভিযানেই। তবে এটাই কোনো গ্রহাণু থেকে প্রথম নমুণা সংগ্রহের ঘটনা নয়। এর আগে জাপানি নভোযান হায়াবুসা২ র‍্যুগু (Ryugu) গ্রহাণু থেকে নমুনা সংগ্রহ করেছিল। অবশ্য সে সময় সংগৃহীত নমুনার পরিমাণ ছিল খুব কম, এক চা চামচের সমান। 

নমুনা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে আগামী ১১ অক্টোবর প্রাথমিক ফলাফল জানানো হবে বলে আশা করা হচ্ছে। মোট নমুনা থেকে কিছু নমুনা পরীক্ষার জন্য পাঠানো হবে জাপান ও কানাডার বিজ্ঞানীদের কাছে। কারণ ওই দেশ দুটিও এ অভিযানে সহযোগিতা করেছে নাসাকে।


কিন্তু এই গ্রহাণুর নমুনা কেন এত গুরুত্বপূর্ণ? বিজ্ঞানীদের ধারণা, এই নমুনা পরীক্ষা করে বোঝা যাবে আমাদের সৌরজগতের গ্রহগুলো কীভাবে সৃষ্টি হয়েছিল। পৃথিবীতে কীভাবে পানির সৃষ্টি হয়েছে, সে বিষয়েও হয়তো ধারণা পাওয়া যাবে। কারণ বেনু গ্রহাণুর বয়স প্রায় ৪৫০ কোটি বছর। 

ওসাইরিস-রেক্স অভিযান শুরু হয় ২০১৬ সালে। তখন এ মিশনের বাজেট ছিল ১০০ কোটি ডলার। দুই বছর পর, ২০১৮ সালে নভোযানটি বেনু গ্রহাণুর কাছে পৌঁছায়। এর আরও দুই বছর পরে, ২০২০ সালে নভোযানটি রোবটিক আর্ম ব্যবহার করে বেনু গ্রহাণু থেকে নমুনা সংগ্রহ করে। সেখান থেকে নমুনা নিয়ে পৃথিবীতে ফিরে আসতে সময় লাগে আরও প্রায় আড়াই বছর। এ সময়ে নভোযানটি প্রায় ৬২০ কোটি কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়েছে। 

তবে সফলভাবে নমুনা সংগ্রহ করেই বসে নেই ওসাইরিসস-রেক্স। পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে ক্যাপসুলটি ছেড়েই এখন আবার অ্যাপোফিস নামের একটি গ্রহাণুর দিকে যাত্রা করেছে নভোযানটি। সব ঠিক থাকলে নভোযানটি ২০২৯ সালের মধ্যে ওই গ্রহাণুর কাছে পৌঁছাবে। 


তবে বেনু গ্রহাণু পৃথিবীর জন্য বিপজ্জনক হতে পারে। প্রতি ছয় বছর পরপর গ্রহাণুটি পৃথিবীর কাছে চলে আসে। কোনো কারণে কক্ষপথ বদলে গিয়ে গ্রহাণুটি পৃথিবীর বুকে আছড়ে পড়লে ঘটতে পারে চরম বিপত্তি। তবে এখনই ভয় পাওয়ার কিছু নেই। কারণ বেনুর পৃথিবীর বুকে আছড়ে পড়ার সম্ভাবনা খুব কম। পরপর ১১ বার টস করলে ১১ বারই হেড পড়ার সম্ভাবনা যতটুকু, ওই গ্রহাণু পৃথিবীতে আছড়ে পড়ার সম্ভাবনাও ততটুকু। এরপরেও যদি আপনার দুশ্চিন্তা হয়, তাহলে নাসার ডার্ট মিশন সম্পর্কে একটু বলি। কোনো গ্রহাণু পৃথিবীর জন্য হুমকি হয়ে এলে সেটাকে সরিয়ে দেওয়ার প্রযুক্তি আছে বিজ্ঞানীদের আছে। ২০২২ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর পরীক্ষামূলকভাবে এমন একটি মিশন পরিচালনা করেছে নাসা। নাম ছিল, ডার্ট মিশন। মানে ডাবল অ্যাস্টেরয়েড রিডাকশন টেস্ট। এ অভিযানে একটি গ্রহাণুকে আঘাত করে কক্ষপথ থেকে কিছুটা সরিয়ে দেওয়া হয়। তাই ভয়ের কোনো কারণ নেই। বরং বেনু গ্রহাণুর নমুনা থেকে আমরা কী উদ্ধার করতে পারি, সেটাই এখন দেখার বিষয়।


লেখক: শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়


Post a Comment

Previous Post Next Post